গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল বুধবার (২১ মে, ২০২৫) দুপুরে একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অটোপাসের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ওপর হামলা করেছে। এই ঘটনায় উপাচার্য আহত হয়েছেন, এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলার উদ্যোগ নিয়েছে।
অটোপাসের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ওপর হামলা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিবৃতি অনুসারে, বুধবার দুপুরে গাজীপুর ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। উপাচার্য যখন তার গাড়ি থেকে নামছিলেন, তখন স্নাতক (পাস) ২০২২ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে। তারা অটোপাসের দাবি তুলে ধরে, যার মানে পরীক্ষা ছাড়াই পাস নম্বর দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীর হামলায় উপাচার্য আহত হন।
জনসংযোগ দপ্তর আরও জানায়, এই একই কোর্সের শিক্ষার্থীরা আগেও একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়েছে যে, অটোপাসের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। এই হামলার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, “অটোপাসের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অটোপাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে, অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা ছাড়া পাসের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই দাবি বেশ কয়েকবার উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বারবার জানিয়েছে যে, এটি শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এবং এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেবে না।
এই ঘটনার আগেও, স্নাতক (পাস) ২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল। তাদের দাবি ছিল, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া এবং শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দাবি মেনে নেয়নি।
এই হামলার ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে। উপাচার্যের ওপর হামলা শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের ঘটনা নয়, বরং এটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ: অটোপাসের দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে পারে।
- নিরাপত্তা উদ্বেগ: ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা প্রশাসনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
- আইনি পদক্ষেপ: মামলা দায়েরের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হলে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কমতে পারে।
সময় | ঘটনা |
---|---|
বুধবার, দুপুর | উপাচার্য গাড়ি থেকে নামেন এবং শিক্ষার্থীরা তাকে ঘিরে ধরে। |
দুপুর (কিছুক্ষণ পর) | অটোপাসের দাবিতে বিক্ষোভ উত্তপ্ত হয়, উপাচার্যের ওপর হামলা হয়। |
বিকেল | জনসংযোগ দপ্তর বিবৃতি প্রকাশ করে, অটোপাসের দাবি নাকচ করা হয়। |
বিকেল/সন্ধ্যা | বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলার উদ্যোগ নেয়। |
সন্ধ্যা | গাছা থানার ওসি অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানান। |
সমাধানের পথ
এই ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে তাদের অভিযোগ শোনা দরকার। তাদের যদি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময় বা সুযোগের অভাব থাকে, তাহলে সেটি সমাধানের জন্য বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন অতিরিক্ত ক্লাস বা গাইডলাইন প্রদান।
দ্বিতীয়ত, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার মান ও পরীক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। অটোপাসের মতো দাবি শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে, এবং এটি তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
ফাইনাল কথা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনা একটি দুঃখজনক ঘটনা, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি শোনা এবং তাদের সমস্যার সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও সংলাপের মাধ্যমে হওয়া উচিত। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আপনি কী মনে করেন? এই ঘটনা সম্পর্কে আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করুন।
তথ্যসূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.