বাংলাদেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা আবারও রাস্তায় নেমেছে। এবার তাদের ঘোষণা, বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ বর্জন। কারণ? ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। ঢাকা পলিটেকনিক থেকে শুরু করে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শুক্রবার কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। তাদের কথায়, এই আন্দোলন শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের একটি সম্মিলিত কণ্ঠ।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বর্জন
শিক্ষার্থীদের দাবি, সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রিটে বলা হয়েছে, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে তারা “কালো রিট” বলে আখ্যা দিয়েছে। কারণটা সহজ ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সাধারণ যোগ্যতা মাত্র এইচএসসি বা এসএসসি পাস। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, এমন কম যোগ্যতার কাউকে কীভাবে শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া যায়? তাদের মতে, এটা শুধু কারিগরি শিক্ষার মান নষ্ট করবে না, বরং পুরো সেক্টরের ভবিষ্যৎকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তারা বলছে, হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে তাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
এর আগেও গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। সেদিন ঢাকা পলিটেকনিকের নেতৃত্বে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সাতরাস্তা ব্লক করে দেয়। দীর্ঘ সময় সড়ক অবরোধের পর তৎকালীন সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন ও মহাপরিচালক মো. আজিজ তাহের খান শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন। তারা বলেছিলেন, ছয় দাবি বাস্তবায়ন হবে এবং ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির মামলা বাতিলের জন্য কাজ করা হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।
ছয় দাবিতে আন্দোলন
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি হলো তাদের ছয় দফা দাবি। এগুলো হলো:
- ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের স্থানান্তর: এদের কারিগরি অধিদপ্তর ও সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে।
- ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স ৪ বছর করা: প্রতি সেমিস্টার ৬ মাস মেয়াদি করতে হবে এবং আধুনিক কারিকুলাম চালু করতে হবে।
- উপসহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষণ: এই পদে অন্য কাউকে আবেদনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।
- কারিগরি শিক্ষা সংস্কার: টেকনিক্যাল শিক্ষার জনবল দিয়ে সিস্টেম পরিচালনা করতে হবে।
- শিক্ষক সংকট দূর করা: বিতর্কিত নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে শূন্যপদে টেকনিক্যাল শিক্ষার জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
- উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানো: ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য কমপক্ষে তিনটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
গত ১৯ মার্চ রাতে ঢাকা পলিটেকনিক থেকে একটি মিছিল বের হয়। সেদিন থেকে এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, যতক্ষণ না তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ তারা পিছু হটবে না। এবার তারা ফরম পূরণ বর্জনের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জন্য একটি চাপ সৃষ্টি করবে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং পুরো কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে। সরকার ও কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা। না হলে, এই আন্দোলন আরও বড় আকার নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের কথা শুনে, তাদের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানে আসা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা সম্পর্কিত তথ্য সবার আগে পড়তে শিক্ষা নিউজকে অনুসরণ করুন।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.