লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন সম্প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যেখানে চিভনিং এবং কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রাপ্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই স্কলারশিপগুলো বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। এই অনুষ্ঠান শুধু তাদের অর্জনের স্বীকৃতিই নয়, বরং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
২৩ মে ২০২৫, শুক্রবার বিকেলে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে ৪০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধিত করা হয়, যারা চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপের আওতায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর।
বাংলাদেশের চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারদের সংবর্ধনা ২০২৫
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, “চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের এই অসাধারণ অর্জন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের আশাবাদী করে। আপনারা এই মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ অর্জনের মাধ্যমে শুধু নিজেদের জন্য গর্বের স্থান তৈরি করেননি, বরং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করেছেন।” তিনি আরও আশ্বাস দেন যে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, “এই স্কলারশিপগুলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। শিক্ষার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও ফলপ্রসূ হবে।” এদিকে, চিভনিং সেক্রেটারিয়েটের ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু চ্যাডউইক জানান, স্কলারশিপের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ফাউন্ডেশন এবং কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আরও স্কলারশিপের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছি।”
কমনওয়েলথ স্কলারশিপের গুরুত্ব
কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ম্যাগি গনকাভস বলেন, “কমনওয়েলথ স্কলারশিপ শুধু শিক্ষার জন্য নয়, এটি অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা আশা করি, এই স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবেন।”
নিম্নে চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপের মধ্যে একটি তুলনামূলক টেবিল দেওয়া হলো, যা এই দুই স্কলারশিপের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে:
বিষয় | চিভনিং স্কলারশিপ | কমনওয়েলথ স্কলারশিপ |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি এবং পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জন। | কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক লক্ষ্য অর্জন। |
অর্থায়ন | যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস। | কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন এবং যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়। |
যোগ্যতা | স্নাতক ডিগ্রি, ন্যূনতম ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের গুণাবলী। | কমনওয়েলথ দেশের নাগরিক, স্নাতক ডিগ্রি, উন্নয়নমূলক প্রভাব সৃষ্টির সম্ভাবনা। |
মেয়াদ | সাধারণত ১ বছর (মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য)। | ১-২ বছর (মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য)। |
আবেদন প্রক্রিয়া | অনলাইন আবেদন, সাক্ষাৎকার, রেফারেন্স লেটার। | অনলাইন আবেদন, একাডেমিক মেরিট, উন্নয়নমূলক লক্ষ্যের উপর ফোকাস। |
সুবিধা | টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ, ভ্রমণ ভাতা। | টিউশন ফি, জীবনযাত্রার খরচ, গবেষণার জন্য অতিরিক্ত তহবিল। |
চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। এই স্কলারশিপগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, এবং এর জন্য শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, নেতৃত্বের গুণাবলী এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করতে হয়। এই ৪০ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রদান করবে বলে আশা করা যায়।
হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম শিক্ষার্থীদের প্রতি হাইকমিশনের পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনারা যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন যেকোনো সমস্যায় আমাদের দ্বারস্থ হতে পারেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।” এই আশ্বাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে এবং তাদের শিক্ষাজীবনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু শিক্ষার সুযোগই নয়, এটি তাদের বিশ্বমানের নেতৃত্ব গড়ে তোলার একটি প্ল্যাটফর্ম। এই শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, এই স্কলারশিপগুলো দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক মুহূর্ত। চিভনিং ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ প্রাপ্ত এই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের প্রতীক। এই ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.