দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। আগামীকাল সোমবার, ২৭ মে ২০২৫ থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ। তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন। এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি, যা শিক্ষকদের জীবনমান এবং পেশাগত অগ্রগতির সঙ্গে জড়িত।
ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সহকারী শিক্ষকেরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য ধাপে ধাপে আন্দোলন করে আসছেন। ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত তারা প্রতিদিন ১ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত এই কর্মবিরতি বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা করা হয়। অবশেষে, ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় এখন তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষকেরা সরকারের কাছে তাদের কথা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিন দফা দাবি
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের তিনটি প্রধান দাবি হলো:
- চাকরির শুরুতে ১১তম বেতন গ্রেড নির্ধারণ: প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর পদকে ১১তম গ্রেডে নির্ধারণ করা।
- উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন: ১০ বছর এবং ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় জটিলতা দূর করা।
- প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি: প্রধান শিক্ষক পদে দ্রুত এবং শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
এই দাবিগুলো শিক্ষকদের পেশাগত এবং আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, বর্তমান বেতন কাঠামো এবং পদোন্নতির প্রক্রিয়া তাদের পরিশ্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড হবে ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড। এই প্রস্তাব এসেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং আদালতের রায়ের আলোকে।
কিন্তু এই উদ্যোগ শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তারা এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি, শুরুর বেতন গ্রেড ১২তম নয়, ১১তম গ্রেড হতে হবে। এই অসন্তোষ থেকেই তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্দোলনের প্রভাব
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই কর্মবিরতি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, তাদের এই আন্দোলন শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ন্যায্য বেতন ও পদোন্নতি তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াবে।
সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শিক্ষকেরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং শিক্ষকদের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি শিক্ষা খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.