চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ১৩ মে। এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন শিক্ষার্থী। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পার না হতেই ফলাফলের নিয়ম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের দুই দফা দাবি নিয়ে আগামী রোববার (২৫ মে) শিক্ষা ভবনের সামনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরতে চান।
এসএসসি ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ২০২৫
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সুস্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দাবি হলো, লিখিত (তত্ত্বীয়) ও বহুনির্বাচনি (এমসিকিউ) পরীক্ষার নম্বর একসঙ্গে যোগ করে পাস-ফেল ও জিপিএ নির্ধারণ করা। বর্তমানে, এসএসসি পরীক্ষায় লিখিত এবং এমসিকিউ অংশে আলাদাভাবে পাস মার্কস অর্জন করতে হয়। যদি কোনো শিক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেও এমসিকিউতে ফেল করে, তাকে সামগ্রিকভাবে ফেল ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এই নিয়ম পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের মতে, ২০১৮ সালের আগে এমন আলাদা পাস মার্কস ছিল না, এবং তারা চান পুরনো নিয়মে ফিরে যাওয়া হোক।
দ্বিতীয় দাবি হলো, সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চালু করা। এর মাধ্যমে ফল প্রকাশের কিছুদিন পরই যারা কোনো বিষয়ে ফেল করবে, তারা সেই বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এই দাবিগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায্য এবং বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন অনেকে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই সমাবেশে অংশ নেবেন রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শাহনেওয়াজ পারভেজ। তিনি বলেন, “আমরা চাই লিখিত ও এমসিকিউ পরীক্ষার নম্বর একসঙ্গে যোগ করে ফলাফল নির্ধারণ করা হোক। এখনকার নিয়মে অনেক শিক্ষার্থী অযথা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ, এবং আমরা আশা করছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের দাবি মেনে নেবে।”
এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল এবং লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। এরপর ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়, যা এসএসসি ও দাখিলের ক্ষেত্রে ২২ মে শেষ হয়েছে। তবে ভোকেশনাল বাস্তব প্রশিক্ষণ পরীক্ষা চলবে ২৩ মে থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত। নিচের সারণিতে পরীক্ষার সময়সূচি ও পরিসংখ্যান সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো:
বিষয় | তথ্য |
---|---|
পরীক্ষা শুরুর তারিখ | ১০ এপ্রিল ২০২৫ |
লিখিত পরীক্ষা শেষ | ১৩ মে ২০২৫ |
ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ (এসএসসি ও দাখিল) | ২২ মে ২০২৫ |
ভোকেশনাল বাস্তব প্রশিক্ষণ | ২৩ মে – ১ জুলাই ২০২৫ |
মোট পরীক্ষার্থী | ১৯,২৮,২৮১ জন |
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শুধু তাদের ফলাফলের ক্ষেত্রেই নয়, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান নিয়মে, একটি অংশে (যেমন, এমসিকিউ) ফেল করলে সামগ্রিক ফলাফল বাতিল হয়ে যায়, যা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য মানসিক ও একাডেমিক চাপ সৃষ্টি করে। লিখিত ও এমসিকিউর নম্বর একসঙ্গে যোগ করার নিয়ম চালু হলে শিক্ষার্থীদের উপর এই চাপ কমবে এবং তাদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।
এছাড়া, সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার প্রবর্তন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দ্বিতীয় সুযোগ তৈরি করবে। এটি তাদের মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি পুনরায় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেবে। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, এই ধরনের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সাফল্যের হার বাড়াতে পারে।
আগামী রোববারের সমাবেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবং তারা আশা করছেন তাদের দাবি বিবেচনা করা হবে। এই আন্দোলন শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কারের একটি নতুন পথ তৈরি করতে পারে।
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের একটি প্রচেষ্টা। লিখিত ও এমসিকিউ নম্বর একসঙ্গে যোগ করা এবং সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চালুর দাবি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ন্যায্য মূল্যায়ন ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ড যদি এই দাবিগুলো বিবেচনা করে, তবে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.