বন্ধুরা, আজ আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে কথা বলবো। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে আমরা সবাই বুয়েট (BUET) বলে চিনি, সেখানে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। এটা অনেকের জন্যই একটা বড় সুখবর, কারণ বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর মনে থাকে। তবে এই সুখবরের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও এসেছে, যেগুলো নতুন শিক্ষার্থীদের জানা দরকার। আমি আজ তোমাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, যেন সবকিছু পরিষ্কার হয়।
বুয়েটের ক্লাস শুরু ১২ এপ্রিল ২০২৫
সম্প্রতি বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর (DSW) একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবে আগামী ১২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে। শুধু নতুন শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বুয়েটের সব স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও এই দিন থেকে ক্লাস শুরু হবে। এটা একটা বড় খবর, কারণ এই তারিখ থেকে ক্যাম্পাস আবারো গমগম করবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আর উৎসাহ নিয়ে।
তবে শুধু ক্লাস শুরুর খবরই নয়, এই বিজ্ঞপ্তিতে আরো কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল (Residential Hall) নিয়ে কিছু কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়টা একটু গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, কারণ এখানে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
আবাসিক হল বিষয়ে নতুন নির্দেশনা
বুয়েটের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি আবাসিক হলে ভর্তি হতে হয়। এটা হতে পারে আবাসিক (Residential) অথবা অনাবাসিক (Attached) শিক্ষার্থী হিসেবে। কিন্তু এবারের সমস্যা হলো, হলগুলোতে সিটের সংখ্যা খুবই কম। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষসহ পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকবে। এত বেশি শিক্ষার্থীর জন্য হলে জায়গা দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এই কারণে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর সময় হলে থাকার ব্যবস্থা না-ও হতে পারে। এটা শুনে অনেকে হয়তো একটু চিন্তায় পড়ে যেতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ এটাও বলেছে যে, তারা চেষ্টা করবে পর্যায়ক্রমে সিট খালি হলে নতুনদের জন্য জায়গা করে দিতে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার (Priority) দেওয়া হবে। এটা একটা ভালো দিক, কারণ অনেক শিক্ষার্থী দূর থেকে এসে পড়তে চায়।
তবে যারা এখনই হলে জায়গা পাবে না, তাদের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরে (Off-Campus) থেকে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে। এটা একটু কষ্টের হলেও, নতুন জীবনের শুরুতে এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
নতুন শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, তাহলে হলের ব্যবস্থা কীভাবে হবে? বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হল বণ্টনের তালিকা (Hall Allocation List) শিগগিরই বুয়েটের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তাই যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের নিয়মিত ওয়েবসাইট চেক করতে হবে। এই তালিকা দেখে বোঝা যাবে কে কোন হলে থাকবে বা কার জন্য কী ব্যবস্থা হচ্ছে।
বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের ভূমিকা
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর শুধু হলের তত্ত্বাবধানই করে না, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য আরো অনেক কিছু করে। তারা চায় শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনায় ভালো না হয়ে, সার্বিকভাবে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। এজন্য তারা খেলাধুলা (Sports), শরীরচর্চা (Physical Exercise), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (Cultural Events)—এসব আয়োজন করে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সুবিধা (Medical Facilities) দেওয়ার দায়িত্বও তাদের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা চায় শিক্ষার্থীরা প্রকৌশলী (Engineer), স্থপতি (Architect), পরিকল্পনাবিদ (Planner) হওয়ার পাশাপাশি একজন সুনাগরিক (Good Citizen) হিসেবে গড়ে উঠুক। এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে নতুন শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এটা সত্যিই একটা বড় সুযোগ, কারণ বুয়েটে পড়ার পাশাপাশি জীবনের অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে।
নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ
যারা এবার বুয়েটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের জন্য এটা একটা নতুন যাত্রা। কিন্তু হলের সিট নিয়ে সমস্যার কথা শুনে অনেকে হয়তো একটু হতাশ হতে পারেন। আমি বলবো, এটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে বরং পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। যারা ঢাকায় থাকেন, তারা বাড়ি থেকে পড়াশোনা শুরু করতে পারেন। আর যারা ঢাকার বাইরে থেকে আসবেন, তারা আগে থেকে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন।
এছাড়া, বুয়েটের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। কারণ হল বণ্টনের তালিকা কবে প্রকাশ হবে, সেটা জানা গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বুয়েটে পড়তে গেলে একটু ধৈর্য আর পরিকল্পনার দরকার। এই সমস্যাগুলো সাময়িক, কিন্তু এখান থেকে পাওয়া শিক্ষা আর অভিজ্ঞতা সারাজীবন কাজে লাগবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, হলের সিট নিয়ে এত সমস্যা কেন? আসলে বুয়েটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু হলের সংখ্যা বা সিট বাড়ছে না। পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকবে বলে জায়গার সংকট আরো বেড়ে গেছে। এটা একটা বাস্তব সমস্যা, যেটা সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের সময় লাগবে। তবে তারা চেষ্টা করছে, এটা একটা আশার কথা।
বন্ধুরা, বুয়েটে পড়ার সুযোগ পাওয়া মানে একটা বড় স্বপ্ন পূরণ। ১২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস শুরু হচ্ছে, এটা একটা আনন্দের খবর। হলের সিট নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও, কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে সবাইকে ধাপে ধাপে জায়গা করে দিতে। তাই নতুন শিক্ষার্থীদের বলবো, ধৈর্য ধরে এই নতুন জীবন শুরু করো। বুয়েট শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এখানে তুমি জীবনের অনেক কিছু শিখবে। সবাইকে শুভকামনা জানিয়ে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। তোমাদের নতুন যাত্রা সুন্দর হোক, এই কামনা করি। এরকম আরও তথ্য পড়ার জন্য শিক্ষা নিউজকে নিয়মিত পড়ুন এবং শিক্ষানিউজের ইউটিউব চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করুন।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.