স্কুল বা কলেজ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় একটি সুন্দর বিদায়ী ভাষণ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভাষণ দিতে ভয় পায়। এর প্রধান কারণ হলো, তারা নিয়মিত অনুশীলন করে না। ভাষণ দেওয়ার জন্য অনুশীলন যেমন দরকার, তেমনি জানতে হবে কীভাবে একটি ভালো বিদায়ী ভাষণ তৈরি করা যায়। নতুন ভাষণ লেখার কৌশল শিখলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আজ আমরা এখানে একটি সহজ বিদায়ী ভাষণের নমুনা দিচ্ছি, যা তোমরা লিখে নিতে পারো।
বিদায়ী ভাষণ বিভিন্ন ধরনের হয়। কিন্তু আজ আমরা শুধু স্কুল বা কলেজ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ের ভাষণ নিয়ে কথা বলব। এই ভাষণে শিক্ষক, বন্ধু আর স্মৃতির কথা তুলে ধরা যায়। উদাহরণস্বরূপ, তুমি বলতে পারো, “আমার প্রিয় শিক্ষকেরা আমাকে সবসময় সঠিক পথ দেখিয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মজার দিনগুলো কখনো ভুলব না।” এমন কথা শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। ভাষণ সংক্ষিপ্ত রাখা ভালো, কারণ বেশি লম্বা হলে শ্রোতারা বিরক্ত হতে পারে। তাই সহজ শব্দে, স্পষ্টভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করো। অনুশীলন করলে ভাষণ দেওয়া সহজ আর মজার হয়ে ওঠে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিদায়ী ভাষণ
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার,
আজ আমার মন ভারী, চোখে একটু জল আর মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়েছি। কারণ, আজ আমাদের প্রিয় বড় ভাই-বোনদের বিদায় অনুষ্ঠান। আমাদের সিনিয়রদের এই বিদায় মানে শুধু একটা অনুষ্ঠান নয়, এটা আমাদের হৃদয়ের একটা বড় অংশের বিদায়। তবুও আমরা জানি, মন থেকে আপনাদের কখনো ভুলতে পারব না। এই কলেজে আমরা অনেক দিন একসঙ্গে কাটিয়েছি। আপনারা আমাদের বড় ভাই-বোনের মতো ছিলেন। আপনাদের পথ ধরে আমরা এগিয়ে গেছি, আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
আমাদের জীবনে আপনাদের অবদান অনেক। আপনারা আমাদের পড়াশোনায়, খেলাধুলায়, আর জীবনের ছোট-বড় বিষয়ে পথ দেখিয়েছেন। আপনাদের পরামর্শ আর উৎসাহ আমাদের মনে গেঁথে আছে। এজন্য আমরা আপনাদের কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু আজ, ইচ্ছা না থাকলেও আপনাদের বিদায় দিতে হচ্ছে। জীবনের নিয়মই এমন—একদিন সবাইকেই বিদায় নিতে হয়। এই কলেজ আমাদের জন্য একটা ছোট্ট জগৎ। এখানে আমরা হাসি-আনন্দে দিন কাটিয়েছি। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে একদিন আলাদা পথে হাঁটতে হয়।
আমাদের একসঙ্গে কাটানো দিনগুলো শীতের সকালের শিশিরের মতো। সূর্য উঠলেই তা মিলিয়ে যায়। তেমনি, আপনারা আজ এখান থেকে বিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু আমরাও তো বেশি দিন থাকব না। খুব শিগগির আমরাও আপনাদের পথ ধরে এগিয়ে যাব। আজ আপনারা শিক্ষাজীবনের একটা ধাপ শেষ করে নতুন জীবনে পা রাখছেন। আমাদের শুভকামনা আর দোয়া রইল, যেন আপনারা জীবনে সফল হন। আপনারা যেন অনেক উঁচুতে পৌঁছে দেশ আর জাতির জন্য কিছু করতে পারেন।
আমরাও আপনাদের দেখানো পথে চলতে চাই। আপনাদের কাছ থেকে আমরা শুধু পড়াশোনা নয়, জীবনের বড় বড় শিক্ষাও পেয়েছি। আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকে যে স্মৃতি দিয়েছেন, তা আমাদের মনে চিরদিন থাকবে। হয়তো আমাদের কথায় বা কাজে আপনারা কখনো কষ্ট পেয়ে থাকতে পারেন। তাই আমরা আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমাদের ভুলগুলো ভাই-বোনের মতো ক্ষমা করে দেবেন।
বিদায় দেওয়া সত্যিই কঠিন। মন চায় না আপনাদের ছেড়ে দিতে। কিন্তু এই বিদায় তো শুধু শরীরের, মনের বিদায় নয়। আমরা সবসময় আপনাদের কথা মনে রাখব। একটা কবিতার লাইন মনে পড়ছে–
“যেতে নাহি দিব হায়,
তবু যেতে দিতে হয়,
তবু চলে যায়।”
আপনাদের জন্য আমাদের অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা আছে। এই কলেজে আপনাদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনের সোনার সম্পদ। আপনারা যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা চাই, আপনারা জীবনে অনেক বড় কিছু করুন। আপনাদের সাফল্য আমাদের গর্বের কারণ হবে।
শেষ করার আগে আরেকটু কথা বলি। এই কলেজে আপনারা আমাদের শুধু বন্ধু বা সিনিয়র ছিলেন না, আমাদের পরিবারের একজন ছিলেন। আপনাদের পরামর্শ, হাসি, আর ভালোবাসা আমাদের সবসময় পথ দেখাবে। আমরা আশা করি, আপনারাও আমাদের মনে রাখবেন। জীবনের নতুন এই পথে আপনারা যেন সবসময় হাসিমুখে এগিয়ে যান। বিদায়ী মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। এই কলেজের সব ছোট ভাই-বোনদের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, সুস্বাস্থ্য আর দীর্ঘ জীবন কামনা করি। সবাইকে ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার এই বিদায়ী ভাষণ শেষ করছি। ধন্যবাদ।
স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি, আমার সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সামনে বসে থাকা আমার প্রিয় সব শিক্ষার্থী বন্ধুদের প্রতি আমার আন্তরিক সালাম ও শুভকামনা। আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি আমাদের সবার হয়ে কিছু কথা বলতে। এই মুহূর্তটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজ আমরা এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিচ্ছি।
অনেক দিন ধরে আমরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এখানকার প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদেরকে নানা বিষয় খুব সহজ ও সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। তাঁদের শেখানোর ধরন এত ভালো ছিল যে আমরা কখনো তা ভুলতে পারব না। তাঁরা আমাদের জীবনে আলোর মতো কাজ করেছেন। তাই আমরা তাঁদের কাছে সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু মন না চাইলেও আজ আমাদের এই প্রিয় জায়গা ছেড়ে যেতে হচ্ছে। এই দিনটি আমাদের শিক্ষাজীবনের একটি অংশের শেষ এবং নতুন একটি অংশের শুরু।
আমরা যখন এখানে পড়তে এসেছিলাম, তখন অনেক ছোট ছিলাম। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের বড় হতে সাহায্য করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের শুধু বইয়ের জ্ঞানই দেননি, জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও দিয়েছেন। তাঁরা আমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন, ভুল হলে শাসন করেছেন। তখন হয়তো মনে হতো এটা বিরক্তিকর, কিন্তু আজ বুঝতে পারছি তাঁদের এই কঠোরতা আমাদের ভালোর জন্যই ছিল। এই শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে।
আমি আপনাদের সবাইকে বলতে চাই, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যেন আমরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করে পড়াশোনা করতে পারি এবং দেশের জন্য কিছু ভালো কাজ করতে পারি। আমাদের স্বপ্ন আছে, এই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখার। আপনাদের দোয়া আমাদের সেই পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
এই দীর্ঘ সময়ে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। কখনো কখনো শিক্ষকদের কথা না শুনে ভুল করেছি। হয়তো আমাদের কোনো কাজে বা আচরণে তাঁরা কষ্ট পেয়েছেন। আমাদের ছোট-বড় ভুলের জন্য আমি সবার হয়ে ক্ষমা চাইছি। আমরা ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যদি কখনো অসম্মান করে থাকি, তাহলে দয়া করে আমাদের মাফ করে দিন। আমরা সত্যিই দুঃখিত।
বিদায়ের এই মুহূর্তে মনটা ভারী হয়ে আছে। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে শুধু একটি স্কুল বা কলেজ নয়, এটা আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি। এখানে কাটানো প্রতিটি দিন আমাদের মনে থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাসি, তাঁদের উৎসাহ, তাঁদের পরামর্শ সবকিছু আমরা মিস করব। তবে আমরা চাই না এই বিদায় শুধুই দুঃখের হোক। এটা আমাদের জন্য নতুন শুরুর একটি সুযোগ।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখে বের হচ্ছি। এখানে পাওয়া জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের পথে আলো দেখাবে। আমরা চাই, আমাদের কাজের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জ্বল হয়। যেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাদের দেখে গর্ব করতে পারেন।
শেষ করার আগে আমি এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। আমাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্যও রইল ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। তাঁদের সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবনের জন্য দোয়া করি। আজ আমি এখান থেকে বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু এই জায়গা আমার হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.