বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নারী কোটা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে ৩০ শতাংশ নারী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। রোববার (২৫ মে ২০২৫) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এই সিদ্ধান্তকে নারীর ক্ষমতায়নের পথে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিবৃতিতে সই করেছেন সংগঠনের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
নারী কোটা বাতিলে শিক্ষা খাতে নতুন বিতর্ক
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২২ মে এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে, শহরাঞ্চলে ৪০ শতাংশ এবং মফস্বল এলাকায় ২০ শতাংশ কোটা নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, যা গড়ে ৩০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করত। এই কোটা ব্যবস্থা গ্রামীণ ও পশ্চাৎপদ এলাকার শিক্ষিত নারীদের শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
কিন্তু নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নারী কোটা বাতিল করে মোট কোটার পরিমাণ কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এই কোটার মধ্যে ৫ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য, ১ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষিত। এই পরিবর্তন শিক্ষা খাতে নারীদের অংশগ্রহণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছে মহিলা পরিষদ।
মহিলা পরিষদের অবস্থান
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তাদের বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, নারী কোটা শিক্ষিত নারীদের জন্য শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে নারীরা প্রায়ই সুযোগ থেকে বঞ্চিত, সেখানে এই কোটা তাদের ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারী শিক্ষকদের উপস্থিতি স্কুলে একটি ইতিবাচক ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে মেয়েদের, জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করেন, যা তাদের শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে।
নারী কোটা বাতিলের ফলে শিক্ষা খাতে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রামীণ এলাকার অনেক নারী, যারা এই কোটার মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছেন, তারা এখন সুযোগ হারাতে পারেন। এছাড়া, শহরাঞ্চলেও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদ কমে গেলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে, যা নারীদের পক্ষে বৈষম্যমূলক হতে পারে।
কোটা প্রকার | পুরোনো কোটা | নতুন কোটা |
---|---|---|
নারী কোটা (শহরাঞ্চল) | ৪০% | ০% |
নারী কোটা (মফস্বল) | ২০% | ০% |
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান | – | ৫% |
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী | – | ১% |
শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ | – | ১% |
মোট কোটা | ৩০% (গড়ে) | ৭% |
নারী কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত সমাজে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি নারীদের পেশাগত উন্নয়নের পথে একটি প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা এখন পিছিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোটা ব্যবস্থা সংশোধন করে আরও ন্যায্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে। তবে এই যুক্তি মহিলা পরিষদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ফাইনাল ওয়ার্ড
নারী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষা খাতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দাবি, এই কোটা ব্যবস্থা নারীদের জন্য শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এটি বাতিল করা হলে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা খাতে তাদের অবদান কমে যেতে পারে। তাই সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে নারী কোটা বহাল রাখা। শিক্ষা খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এই কোটা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, এবং এটি বাতিল করা হলে নারীদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি হবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.