দ্রবণ একটি অতি পরিচিত শব্দ। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চা বানানোর সময় চিনি মেশানো থেকে শুরু করে কৃষিতে সার ব্যবহার, চিকিৎসায় স্যালাইন দেওয়া সব ক্ষেত্রেই দ্রবণের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু দ্রবণ আসলে কী? এটি কীভাবে কাজ করে? কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে আমাদের প্রথমে দ্রবণের সংজ্ঞা এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বুঝতে হবে।
দ্রবণ কাকে বলে
দ্রবণ হল একটি হোমোজেনিয়াস মিশ্রণ, যেখানে একটি পদার্থ (দ্রাব্য) অন্য একটি পদার্থে (দ্রাবক) সম্পূর্ণভাবে মিশে যায়। সহজ ভাষায়, দ্রবণ হল এমন একটি মিশ্রণ যেখানে দুটি বা ততোধিক পদার্থ একে অপরের মধ্যে এমনভাবে মিশে যায় যে, আলাদা করে তাদের চেনা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, চিনি-পানি বা নুন-পানি হল দ্রবণ। এখানে চিনি বা নুন পানিতে সম্পূর্ণভাবে মিশে যায় এবং মিশ্রণটি একই রকম দেখায়। দ্রবণের দুটি প্রধান উপাদান থাকে:
- দ্রাবক (Solvent): এটি সেই পদার্থ যা দ্রাব্য পদার্থকে দ্রবীভূত করে। সাধারণত দ্রাবক তরল হয়। যেমন, পানি।
- দ্রাব্য (Solute): এটি সেই পদার্থ যা দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়। যেমন, চিনি বা নুন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা: দ্রবণ তৈরির সময় দ্রাব্য পদার্থের অণুগুলি দ্রাবকের অণুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ, দ্রাব্য পদার্থের প্রকৃতি বদলায় না।
আরও পড়ুন– রসায়ন ২য় পত্র ১ম অধ্যায় mcq।

দ্রবণের প্রকারভেদ
প্রকার | বর্ণনা | উদাহরণ |
---|---|---|
গ্যাসীয় দ্রবণ | দ্রাবক এবং দ্রাব্য উভয়ই গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। | বায়ু (অক্সিজেন, নাইট্রোজেন মিশ্রণ) |
তরল দ্রবণ | দ্রাবক তরল এবং দ্রাব্য তরল বা কঠিন হতে পারে। | নুন-পানি, চিনি-পানি |
কঠিন দ্রবণ | দ্রাবক এবং দ্রাব্য উভয়ই কঠিন অবস্থায় থাকে। | লৌহ-কার্বন মিশ্রণ |
প্রতিটি দ্রবণের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে, যা একে অন্যান্য মিশ্রণ থেকে আলাদা করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- হোমোজেনিয়াস মিশ্রণ: দ্রবণের সব অংশ একই রকম হয়। আলাদা করে দ্রাবক এবং দ্রাব্য চেনা যায় না।
- স্থিতিশীলতা: দ্রবণ সাধারণত স্থিতিশীল হয়। দ্রাব্য পদার্থ দ্রাবক থেকে আলাদা হয় না।
- দ্রাব্যতা: দ্রাব্য পদার্থের দ্রাবকে দ্রবীভূত হওয়ার ক্ষমতা। এটি তাপমাত্রা এবং চাপের উপর নির্ভর করে।
দ্রবণ তৈরির প্রক্রিয়া
দ্রবণ তৈরির প্রক্রিয়া বেশ সহজ, কিন্তু এর পেছনে কিছু মৌলিক নিয়ম কাজ করে।
- দ্রাব্য পদার্থ দ্রাবকে মেশানো: প্রথমে দ্রাব্য পদার্থকে দ্রাবকের মধ্যে মেশানো হয়।
- মিশ্রণ: দ্রাব্য পদার্থের অণুগুলি দ্রাবকের অণুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
- সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হওয়া: দ্রাব্য পদার্থ সম্পূর্ণভাবে দ্রাবকে মিশে যায়।
তাপমাত্রা এবং চাপের প্রভাব:
- তাপমাত্রা বাড়ালে দ্রাব্য পদার্থ দ্রাবকে দ্রুত দ্রবীভূত হয়। যেমন, গরম পানিতে চিনি দ্রুত মিশে যায়।
- চাপ বাড়ালে গ্যাসীয় দ্রাব্য পদার্থ দ্রাবকে বেশি দ্রবীভূত হয়। যেমন, কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতলে চাপ দিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস দ্রবীভূত করা হয়।

দ্রবণের ব্যবহার
দ্রবণের ব্যবহার আমাদের জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার উল্লেখ করা হল:
- কৃষি:
- সারের দ্রবণ: কৃষিতে সার পানিতে মিশিয়ে জমিতে দেওয়া হয়। এটি গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পানি সেচ: পানিতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মিশিয়ে গাছের শিকড়ে পৌঁছানো হয়।
- শিল্প:
- রং এবং পেইন্ট: শিল্পে রং তৈরি করতে দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
- ধাতু শিল্প: ধাতু গলানোর জন্য এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দ্রবণ ব্যবহৃত হয়।
- চিকিৎসা:
- স্যালাইন দ্রবণ: রোগীদের শরীরে পানির অভাব পূরণ করতে স্যালাইন দেওয়া হয়।
- ইনজেকশন: বিভিন্ন ঔষধ দ্রবণ আকারে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
দ্রবণের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ
দ্রবণ শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তির উন্নতির জন্যও অপরিহার্য। ন্যানো প্রযুক্তি এবং নতুন ধরনের দ্রাবক ও দ্রাব্য পদার্থ আবিষ্কারের মাধ্যমে দ্রবণের ব্যবহার আরও বাড়বে। এটি কৃষি, চিকিৎসা এবং শিল্পক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।
দ্রবণ হল বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা, যা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু একটি মিশ্রণ নয়, বরং একটি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন উপাদানকে একত্রিত করে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। দ্রবণের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাদের জীবনকে সহজ এবং উন্নত করে তোলে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.