চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আমরণ অনশন শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা সেশন জট এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অনিয়মের সমস্যা সমাধানের দাবিতে তারা এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। শনিবার (২৪ মে, ২০২৫) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই অনশন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের দৃঢ় অঙ্গীকার, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন
শিক্ষার্থীদের দুটি প্রধান দাবি হলো:
- সেশন জট নিরসন এবং সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করা।
- আগামী এক বছরের জন্য তিনটি সেমিস্টারের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, ক্লাস শুরু এবং পরীক্ষা শুরু করা।
এই দাবিগুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। সেশন জটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন, যা তাদের ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন:
নাম | শিক্ষাবর্ষ |
---|---|
তারেক মাহমুদ | ২০২০-২১ |
আবু রাজিন মন্ডল | ২০১৮-১৯ |
শাহারোব স্বাধীন | ২০২০-২১ |
মিফতা জাহান মিম | ২০২০-২১ |
পবিত্রী রানী | ২০২০-২১ |
শ্রুতি রাজ | ২০২০-২১ |
হাফসা কাউসার মিশু | ২০২০-২১ |
মো. জাবেদ | ২০২০-২১ |
বখতিয়ারুল | ২০২০-২১ |
মুহাইমিন আনাম | ২০২০-২১ |
ওয়ালীউল্লাহ | ২০২০-২১ |
ক্যএ সিং মার্মা | ২০২০-২১ |
শিক্ষার্থীদের কথায় ফুটে উঠেছে তাদের দীর্ঘদিনের হতাশা এবং প্রশাসনের প্রতি অবিশ্বাস। মুহাইমিন আনাম, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী, বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। কিন্তু কোনো কার্যকর সমাধান পাইনি। আমরা চাই, আমাদের দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেওয়া হোক।” তিনি আরও জানান, সেশন জটের কারণে তারা বারবার পিছিয়ে পড়ছেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
আরাফাত হোসেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী, বলেন, “আমাদের বিভাগ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সেশন জট এখন আমাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের আর কোনো উপায় নেই, তাই আমরণ অনশনে বসতে হলো।”
আবু রাজিন মন্ডল আরও গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার চার বছরের স্নাতক শেষ করতে আট বছর লেগেছে। প্রতিটি প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। বর্তমান প্রশাসন সাত মাস পার করলেও আমাদের সমস্যা নিয়ে কিছুই করছে না।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগের উপাচার্যের আমলে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৮ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান প্রশাসনের কাছেও তারা তাদের দাবি তুলে ধরেছেন, কিন্তু এখনো কোনো সমাধান পাননি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছেন।
শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে সেশন জট একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। এই সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যা তাদের মানসিক ও আর্থিক চাপের মুখে ফেলছে। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের সমবয়সীরা যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করছে, তখন তারা এখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি। এই পরিস্�থিতি তাদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি এবং পরীক্ষা ও ক্লাসের অনিয়মিত সময়সূচী এই সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি সুনির্দিষ্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হলে তাদের শিক্ষাজীবনের গতি ফিরে আসবে।
সমাধানের পথ কী
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং তাদের শিক্ষাজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। একটি সুনির্দিষ্ট অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, সেমিস্টার দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা, এবং সেশন জট নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হলে এই সংকট সমাধান সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের এই আমরণ অনশন শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্যও একটি জরুরি আহ্বান। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে বসে তাদের দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থীর এই আমরণ অনশন তাদের দীর্ঘদিনের হতাশা এবং প্রশাসনের প্রতি অবিশ্বাসের প্রকাশ। তাদের দাবিগুলো শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট সমাধান কঠিন হবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.