এসএসসি পরীক্ষা মানে শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি বড় ধাপ। প্রতি বছরই এই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করে। আর এবার, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষাকে আরও সুষ্ঠু ও নিয়মের মধ্যে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই রয়েছে ১৫টি কঠিন নির্দেশনা। এই নির্দেশনাগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কী হবে যদি এগুলো না মানা হয়? আজকের এই লেখায় আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে যাতে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে এবং কোনো প্রকার জালিয়াতি ছাড়া হয়। প্রতি বছরই শুনতে পাওয়া যায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বা নকলের ঘটনা। এসব বন্ধ করতে এবার তারা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এই নির্দেশনাগুলো মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। না মানলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিল হতে পারে, এমনকি আইনি ঝামেলায়ও পড়তে পারে। তাই এগুলোকে হালকাভাবে না নিয়ে সবাইকে সিরিয়াস হতে হবে।
এসএসসি ২০২৫ পরীক্ষার ১৫টি কঠিন নির্দেশনা
চলুন, এই ১৫টি নির্দেশনা একটু বিস্তারিতভাবে দেখে নিই। এগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য কী বোঝায়, আর কীভাবে মানতে হবে, সেটাও বোঝার চেষ্টা করব।
১. পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ
পরীক্ষা যদি সকাল ১০টায় শুরু হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রে ঢুকে আসন গ্রহণ করতে হবে। এর মানে হলো, বাসা থেকে একটু আগে বের হতে হবে। ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোনো সমস্যা হলে তার দায় শিক্ষার্থীদেরই নিতে হবে। তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করে চলতে হবে।
২. বিলম্বে আসলে রেজিস্টারে তথ্য দিতে হবে
কোনো কারণে যদি কেউ দেরি করে, তাহলে তাকে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় আর দেরির কারণ লিখতে হবে। এটা একটু ঝামেলার ব্যাপার। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন দেরি না হয়।
৩. বিলম্বের তথ্য বোর্ডে পাঠানো হবে
যারা দেরি করবে, তাদের তথ্য সরাসরি শিক্ষা বোর্ডে চলে যাবে। এরপর বোর্ড কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করবে। তবে এটা নিশ্চিত যে এতে শিক্ষার্থীর ওপর একটা চাপ তৈরি হবে।
৪. ১০টা ৩০ মিনিটের পর প্রবেশ নিষেধ
পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট পর, মানে ১০টা ৩০ মিনিটের পর কেউ কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে না। এটা খুবই কঠিন নিয়ম। এক মিনিট দেরি হলেও সুযোগ নেই। তাই সময়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
৫. বহুনির্বাচনী ও সৃজনশীল পরীক্ষার মাঝে বিরতি নেই
আগে প্রথমে বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে, তারপর সৃজনশীল। এই দুইয়ের মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের একটানা লিখতে হবে। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি।
৬. মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল ডিভাইস নিষিদ্ধ
কেন্দ্র সচিব ছাড়া কেউ মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস নিতে পারবে না। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের কাছে যদি এমন কিছু পাওয়া যায়, তাহলে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
৭. শুধু নন-প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর অনুমোদিত
গণিত বা বিজ্ঞানের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা শুধু নন-প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে। অন্য কোনো ডিভাইস বা প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর নিয়ে গেলে সমস্যা হবে।
৮. প্রতি কেন্দ্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট
প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা সবকিছু নজরে রাখবেন। কোনো অনিয়ম হলে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
৯. কেন্দ্রে বাইরের লোক প্রবেশ করতে পারবে না
পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে শিক্ষার্থী আর শিক্ষক ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না। এমনকি অভিভাবকদেরও বাইরে অপেক্ষা করতে হবে। এটা নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে।
১০. দেরিতে শুরু হলে সময় বাড়ানো হবে
কোনো কারণে পরীক্ষা দেরিতে শুরু হলে যত মিনিট দেরি হবে, তত মিনিট বেশি সময় দেওয়া হবে। তবে প্রশ্নে উল্লেখিত সময়ের বাইরে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে না।
১১. উত্তরপত্র ও ওএমআর সঠিকভাবে পূরণ
শিক্ষার্থীদের নিজের রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড, সেট কোড সঠিকভাবে ওএমআর ফর্মে ভরতে হবে। একটু ভুল হলেই উত্তরপত্র বাতিল হতে পারে।
১২. ওএমআর ফর্ম ভাঁজ বা দাগ দেওয়া যাবে না
ওএমআর ফর্ম কোনোভাবেই ভাঁজ করা যাবে না বা অপ্রয়োজনীয় দাগ দেওয়া যাবে না। এতে মেশিনে সমস্যা হতে পারে, আর ফলাফলের ক্ষতি হবে।
১৩. পৃথকভাবে পাস করতে হবে
বহুনির্বাচনী, সৃজনশীল আর ব্যবহারিক অংশে আলাদাভাবে পাস করতে হবে। একটিতে ফেল করলে পুরো পরীক্ষায় ফেল বলে গণ্য হবে।
১৪. প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে জড়ালে শাস্তি
কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক যদি প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে জড়ায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এটা খুব গুরুতর বিষয়।
১৫. পরীক্ষা কেন্দ্রের চারপাশে ১৪৪ ধারা
পরীক্ষার সময় কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এর মানে কোনো জমায়েত বা হট্টগোল করা যাবে না। শান্তি বজায় রাখতে এটা করা হয়েছে।
এই নির্দেশনাগুলো দেখে অনেক শিক্ষার্থী হয়তো ভয় পাচ্ছে। কিন্তু এগুলো আসলে তাদের ভালোর জন্যই। পরীক্ষায় নকল বা প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা কমে গেলে সবাই সমান সুযোগ পাবে। যারা পরিশ্রম করে পড়েছে, তাদের পরিশ্রমের ফল মিলবে। তবে এই নিয়মগুলো মানতে না পারলে শিক্ষার্থীদের বড় বিপদে পড়তে হবে। পরীক্ষা বাতিল হওয়া থেকে শুরু করে আইনি ঝামেলা কোনোটাই কাম্য নয়।
এসএসসি শিক্ষার্থীদের করণীয়
এখন প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই নির্দেশনাগুলো মানবে? প্রথমত, পরীক্ষার সময়সূচি ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। বাসা থেকে আগে বের হতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কলম, ক্যালকুলেটর—সবকিছু আগের দিনই গুছিয়ে রাখতে হবে। মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস বাসায় রেখে যেতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, পরীক্ষার হলে শান্ত থেকে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তারা যেন কোনো গুজবে জড়িয়ে না পড়েন। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ না দিয়ে বরং উৎসাহ দিতে হবে। পরীক্ষার দিন কেন্দ্রের কাছে ভিড় না করে বাসায় অপেক্ষা করাই ভালো।
এসএসসি ২০২৫-এর জন্য এই ১৫টি নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এগুলো মেনে চললে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হবে, আর সবাই ন্যায্য ফলাফল পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো উচিত। শিক্ষার্থীদের উচিত এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া, যাতে পরীক্ষার দিন কোনো সমস্যা না হয়। সবাই মিলে এই নিয়মগুলো মানলে এসএসসি ২০২৫ হবে একটি সফল ও নিরাপদ পরীক্ষা।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.