বন্ধুরা আশাকরি ভালো আছেন। এই লেখায় আমি তোমাদের দিব ক্লাস ৯ এর জন্য বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা। বাংলাদেশ, আমাদের এই সোনার দেশ, যেন প্রকৃতির এক টুকরো স্বর্গ। কবির ভাষায় বললে, এটা ধানের দেশ, গানের দেশ, আর নদীর দেশ। চারদিকে সবুজ ধানের ক্ষেত, ফুলের বাগান, আর নদীর কলকল শব্দে মন জুড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এমনই মায়াবী যে কবি-সাহিত্যিকরা এই দেশ নিয়ে কত কবিতা, গান লিখেছেন। আজ আমরা এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে একটু কথা বলব, যা এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুব কাজে লাগবে। চাকরির পরীক্ষার জন্যও এটা পড়ে রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা Class 9
গ্রামের সবুজ মাঠে দাঁড়ালে মনে হয়, প্রকৃতি যেন রংতুলি দিয়ে ছবি এঁকেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো নদীগুলো দেশের বুক চিরে বয়ে যায়। শীতকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা গ্রাম, আর গ্রীষ্মে আম-কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধ মন ভরিয়ে দেয়। বর্ষায় নদীতে ঢেউয়ের নাচ আর সুন্দরবনের রহস্যময় জঙ্গল আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গল্প বলে। এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
ভূমিকা
বাংলাদেশ নামটা শুনলেই মনের মধ্যে জাগে একটা সবুজের সমারোহ। নদীর কলকল, পাহাড়ের ডাক, সমুদ্রের গর্জন আর গ্রামের মাটির গন্ধ মিলে যেন এই দেশটা একটা জীবন্ত ছবি। এখানে প্রকৃতি তার সব রঙ ছড়িয়ে দিয়েছে। ধানখেতের সবুজ, হাওরের জলরাশি, চা-বাগানের শান্ত ছায়া, আর বনের পাখির ডাক মনকে ভরিয়ে দেয়। নদীগুলো এই দেশের প্রাণ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পানি যেন গান গায়। এই নদীতে মাছ ধরে জেলেরা, আর নৌকা বায় গ্রামের মানুষ। পাহাড়ের কথা বলতে গেলে সিলেটের জাফলং, বান্দরবানের পাহাড়ি পথ মনে পড়ে। সমুদ্রের কথা ভাবলেই কক্সবাজারের ঢেউ চোখে ভাসে। হাওরে পানির ওপর ভাসমান ফসল আর গ্রামের মাটির পথে রাখালের বাঁশি মন ছুঁয়ে যায়।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের সৌন্দর্য
বাংলাদেশ মানেই যেন নদীর কোলঘেঁষা একটা সবুজ দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, সুরমা—এমন অজস্র নদী আমাদের এই দেশের বুক চিরে বইছে। নদীর দুই কূলে সবুজ ধানখেত, পাখির কিচিরমিচির আর নৌকার হাল ধরা জেলেদের ছবি যেন মন ভরিয়ে দেয়। বর্ষার সময় নদীগুলো আরও জেগে ওঠে। দূর-দূরান্তে শুধু পানি আর পানি, আর তার মাঝে জেলেদের জাল ফেলা দেখতে বড্ড মজা। এই নদী শুধু চোখের খোরাকই দেয় না, আমাদের ফসল ফলাতে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে, আর আমাদের গান-কবিতার জগতেও রঙ ছড়ায়। নদীর পাড়ে গ্রামের মানুষের হাসি-খুশি আর মাঝিদের গান যেন বাংলার আসল রূপ ফুটিয়ে তোলে। সত্যিই, নদীমাতৃক বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য দেখে কার না বুক ভরে যায়!
সবুজের স্বর্গ
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন প্রকৃতির এক টুকরো স্বর্গ। বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এই তিন জেলার পাহাড়ি পথে হাঁটলে মনে হয়, সবুজ আর নীলের মিলনমেলা। নীলগিরি পাহাড়ে দাঁড়ালে মেঘ হাতে ছোঁয়া যায়, সাজেক ভ্যালিতে সূর্যোদয় দেখলে চোখ জুড়ায়। নাফাখুম ঝর্ণার শব্দ আর বগা লেকের শান্ত জল মনকে টানে। এখানকার পাহাড়ে সবুজের চাদর, আকাশে মেঘের খেলা আর ঝিরঝির বাতাস যেন গান গায়। উপজাতি ভাই-বোনেদের রঙিন জীবন, তাদের গান-নাচ, আর হাতে বোনা কাপড়ের গল্প এই জায়গাকে আরো রঙিন করে। বান্দরবানের কেওক্রাডং চূড়ায় উঠলে মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছবি চোখের সামনে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য মন ভরায়, শান্তি দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে ক্যামেরা আর ভালো জুতো নিতে ভুলবেন না। প্রকৃতির কাছে হার মানতে এখানে আসুন।
সুন্দরবনের মায়াবী জগৎ
সুন্দরবন, বাংলাদেশের দক্ষিণে ঝুলে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এই বন যেন প্রকৃতির এক জাদুকরী উপহার। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের রাজত্ব, চিত্রা হরিণের লুকোচুরি, কুমিরের সাঁতার আর রঙিন পাখির ডাক। গাছের শ্বাসমূল পানির ওপর দাঁড়িয়ে যেন গল্প বলে। ডলফিন পানিতে খেলা করে, কাঁকড়া বালির ওপর নাচে। বনের গভীরে বাঘের গর্জন আর নদীর কলকল শব্দ মিলে এক অদ্ভুত শান্তি ছড়ায়। সুন্দরবন শুধু বন নয়, এটা এক জীবন্ত গল্প। এখানে প্রতিটি গাছ, পশু আর পাখি মিলে তৈরি করেছে এক অপূর্ব বাস্তুতন্ত্র। বর্ষায় নদী ফুলে ওঠে, আর শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় এই বন। পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন মানে অ্যাডভেঞ্চার আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে যাওয়া। এই বন আমাদের শেখায়, প্রকৃতির সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধন কতটা গভীর হতে পারে।
সৈকতের দেশ
কক্সবাজার, বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বালুর সৈকত। এখানকার নরম বালু, ঢেউয়ের কলকল শব্দ আর সূর্যাস্তের লাল-কমলা রঙ মন ভরিয়ে দেয়। সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ালে মনে হয়, প্রকৃতি যেন গল্প বলছে। কক্সবাজার শুধু বালু আর পানি নয়, এটা জীবনের রঙিন ছবি। এখানে সকালে মাছ ধরার জাল আর রাতে ঝিনুকের হাট মন কাড়ে। ইনানী সৈকতের পাথর আর শান্ত পরিবেশ মানুষকে টানে। মহেশখালীর পাহাড় আর সবুজের মিশেল একটা আলাদা মজা দেয়। সেন্ট মার্টিনে নীল পানি আর প্রবালের রঙিন জগৎ সবাইকে মুগ্ধ করে। আর কুয়াকাটা? ওখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। এমন দৃশ্য আর কোথাও পাবে না। কক্সবাজার সৈকত শুধু ঘোরার জায়গা নয়, এটা মনের শান্তির ঠিকানা। প্রতি পদে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব হয়।
চা-বাগানের সবুজ সিলেট
সিলেট মানেই যেন সবুজের সমারোহ! চা-বাগান, পাহাড়ি ঝরনা, হাওর আর মেঘালয়ের সীমান্ত ঘেঁষা এই জায়গা প্রকৃতির এক খোলা ছবি। শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে দাঁড়ালে মনে হয়, সবুজ কার্পেট পাতা। জাফলংয়ের পাথর আর ঝরনার শব্দ, বিছানাকান্দির স্বচ্ছ পানি, লালাখালের নীল জল আর রাতারগুলের জলমগ্ন জঙ্গল প্রকৃতি যেন এখানে নিজের সব রঙ ঢেলে দিয়েছে। চা-বাগানে সকালে পাতা তুলতে ব্যস্ত মানুষের হাসি-কথা মন ভরায়। শ্রমজীবী নারীদের হাতে পাতা সংগ্রহের দৃশ্য যেন একটা জীবন্ত ছবি। এখানকার শান্ত পরিবেশে বসে এক কাপ চা খেলে মন জুড়ায়। সিলেটের হাওরে নৌকায় চড়ে বা পাহাড়ি পথে হেঁটে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া যায়। শীতকালে এখানকার কুয়াশা আর গ্রীষ্মে সবুজের ঢেউ মুগ্ধ করে।
হাওর আর বাওড়ের সৌন্দর্য
হাওর আর বাওড়ের রূপ দেখলে মন জুড়ায়। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওরগুলো বর্ষায় যেন বিশাল পানির সমুদ্র হয়ে যায়। গ্রামগুলো তখন ছোট ছোট দ্বীপের মতো ভেসে থাকে। নৌকায় চড়ে লোকজন যাতায়াত করে, মাছ ধরে। পানির ওপর সূর্য ডোবার দৃশ্যটা এমন মায়াবী, মনে হয় চোখ ফেরানো যায় না। শীত আসলে এই হাওরে হাজার হাজার পাখি আসে। রাঙা রাঙা পাখির ঝাঁক দেখলে মন ভরে যায়। হাওরের পাশে ধানের খেত, সবুজ গাছপালা মিলে যেন প্রকৃতির একটা ছবি। কোনো কোনো হাওরে ছোট ছোট মেলা বসে, যেখানে গ্রামের মানুষ গান গায়, নৌকার দৌড় দেখায়। এই হাওর আর বাওড় শুধু পানির জায়গা না, এটা গ্রামের মানুষের জীবনের একটা বড় অংশ। হাওরের সৌন্দর্য সবাইকে টানে, একবার দেখলে বারবার ফিরে আসতে মন চায়।
ঋতুভিত্তিক সৌন্দর্য
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। প্রত্যেক ঋতু প্রকৃতির বুকে নতুন রঙ ছড়ায়। গ্রীষ্মকালে গাছভরা আম, কাঁঠাল, লিচুর মিষ্টি গন্ধে গ্রামের পথঘাট মুখরিত। বর্ষায় সবুজের সমারোহ। ধানখেত, গাছপালা আর নদী-খাল পানিতে টইটম্বুর। বৃষ্টির ছটায় মন জুড়ায়। শরৎ এলে নীল আকাশে সাদা কাশফুল দোল খায়, যেন স্বপ্নের মতো। হেমন্তে ধানের শীষে সোনালী আলো ঝিকমিক করে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। শীতের সকালে শিশিরে ভেজা ঘাস আর কুয়াশার চাদরে প্রকৃতি মায়াবী লাগে। আর বসন্তে পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল-হলুদ রঙে গ্রামবাংলা উৎসবমুখর। প্রতি ঋতুতেই বাংলার প্রকৃতি নতুন গল্প বলে। কখনো পাখির কিচিরমিচির, কখনো ফুলের গন্ধে মন ভরায়। গ্রামের মাটির পথে হাঁটতে হাঁটতে ঋতুভিত্তিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে। এই সৌন্দর্যই বাংলার প্রাণ। গ্রামের মানুষের জীবনের সঙ্গে ঋতুর রঙ মিশে একাকার। এই ঋতুভিত্তিক সৌন্দর্য বাংলাদেশের গর্ব।
গ্রামীণ সৌন্দর্য
বাংলার গ্রাম মানেই যেন প্রকৃতির কোলে এক টুকরো স্বর্গ। গ্রামবাংলার সৌন্দর্য চোখে পড়ে মাটির কাঁচা পথে, খেজুর গাছের সারিতে, আর পুকুরঘাটে বউদের কলসি হাতে হাসি-ঠাট্টায়। ধানের খেতে সবুজের ঢেউ, কলাগাছের ছায়া, আর বাঁশঝাড়ের মৃদু শোঁ-শোঁ আওয়াজ মন জুড়ায়। ভোরের কুয়াশায় পাখির কিচিরমিচির, গরুর গাড়ির ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ, আর দূরে কোথাও বাঁশির সুর গ্রামের জীবনকে আরো রঙিন করে। গ্রামের মানুষের সরল হাসি আর পরিশ্রমী জীবন প্রকৃতির সাথে মিশে এক অপূর্ব ছবি আঁকে। হাটবারে কৃষকের তাজা শাক-সবজি, মাছ ধরার জাল হাতে জেলেদের গান, আর বিকেলে ছেলেমেয়েদের মাঠে দৌড়াদৌড়ি এই সবই গ্রামবাংলার সৌন্দর্য। এখানে কোনো কোলাহল নেই, শুধু শান্তি আর ভালোবাসা। গ্রামের এই রূপ দেখলে মন চায় বারবার ফিরে আসতে। গ্রামবাংলার সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়।
উপসংহার
বাংলাদেশ, মোরা বলি, প্রকৃতির একখানা জাদুর বাক্স। এই দেশের নদীগুলো যেন গল্প কয়, পাহাড়গুলো মাথা তুলে দাঁড়ায় গর্ব নিয়ে। জঙ্গলের সবুজ, সমুদ্রের নীল আর হাওর-বাঁওড়ের ঢেউ সব মিলে যেন একখানা ছবি আঁকা। চা-বাগানের শান্তি আর গ্রামের মাটির গন্ধে মন ভরে যায়। ছয়টা ঋতু এসে এই মাটিকে রাঙায় নানান রঙে বর্ষার ঝমঝম, শীতের কুয়াশা, আর বসন্তের ফুলের হাসি। এই প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাগো সম্পদ। মোদের কাজ এই ধন বাঁচিয়ে রাখা। গাছ লাগাই, নদীর পানি পরিষ্কার রাখি এমন কাম করলে প্রকৃতি আমাগো মুখ হাসাবে। গ্রামের মানুষের সাদাসিধা জীবন আর প্রকৃতির মায়া মিলে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে একখানা স্বপ্নের জায়গা। এই দেশ শুধু মাটি-পানি নয়, এটা আমাগো হৃদয়ের টান। প্রকৃতি বাঁচলে আমাগো জীবন হবে আরো সুখের। তাই আইসা, সবাই মিলে এই সৌন্দর্যের যত্ন নিই।
আরও পড়ুন- বাংলা রচনা লেখার নিয়ম।রচনা লেখার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.