দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য একযোগে সোচ্চার হয়েছেন। তিন দফা দাবি নিয়ে তারা সোমবার থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন, যা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, যা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ এবং শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রবন্ধে আমরা এই আন্দোলনের পটভূমি, দাবিগুলোর বিশদ বিবরণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি
দেশে ৬৫ হাজারেরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকেরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে তারা তাদের বেতন গ্রেড এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ এই অসন্তোষকে সংগঠিত করে তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা গত ৫ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত ধাপে ধাপে এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এবং অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় এখন তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির পথ বেছে নিয়েছেন।
এই কর্মসূচি সারা দেশে একযোগে পালিত না হলেও, যেসব এলাকায় সংগঠনের কার্যক্রম বেশি সক্রিয়, সেখানে এর প্রভাব স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন, আবার কিছু বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস চলেছে। এই ভিন্নতা সংগঠনের প্রভাব এবং শিক্ষকদের ঐক্যের সীমাবদ্ধতার ইঙ্গিত দেয়। তবে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তিন দফা দাবি জানায় তারা
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের তিনটি প্রধান দাবি হলো:
- সহকারী শিক্ষক পদকে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ: বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন গ্রেড ১৩তম। তারা দাবি করছেন যে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই পদকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা হোক। এটি শিক্ষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াবে বলে তারা মনে করেন।
- ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন: দীর্ঘদিন চাকরির পরও অনেক শিক্ষক উচ্চতর গ্রেড পেতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হন। এই প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করার দাবি উঠেছে।
- প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি ও দ্রুত পদোন্নতি: সহকারী শিক্ষকরা চান, প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া দ্রুত এবং শতভাগ নিশ্চিত করা হোক, যাতে তাদের ক্যারিয়ারে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত না হয়।
সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে যা জানা গেছে
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড হবে। তবে শিক্ষকদের দাবি ১১তম গ্রেডের, তাই এই প্রস্তাব কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এই আন্দোলন শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার মানের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মবিরতির কারণে কিছু বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে শিক্ষকদের দাবি পূরণ হলে তাদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়বে, যা শিক্ষার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।
এই আন্দোলন নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকরা শিক্ষকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান জরুরি।
ফাইনাল ওয়ার্ড
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এই আন্দোলন শুধু তাদের নিজেদের দাবির জন্য নয়, বরং দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন এবং দ্রুত পদোন্নতির দাবি পূরণ হলে শিক্ষকদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়বে, যা শিক্ষার্থীদের জন্যও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.