এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছেই না। আগামী ১০ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন কিছু শিক্ষার্থী। এমনকি এই দাবি আদায়ে তারা অসহযোগ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এই দাবিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকছে। এই ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আজকের এই লেখায় আমরা পুরো বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখবো এবং জানার চেষ্টা করবো কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষার্থীদের দাবি কী ছিল
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে কিছু শিক্ষার্থী তাদের দাবি তুলে ধরেন। তাদের মূল দাবি ছিল দুটি। প্রথমত, এসএসসি পরীক্ষা এক মাস পেছানো। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি পরীক্ষার মাঝে ৩ থেকে ৪ দিনের বিরতি দেওয়া। এই দাবির পেছনে তারা যুক্তি হিসেবে বলেছেন, রমজান মাসে রোজা রেখে পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। এছাড়া ঈদের ঠিক পরপর পরীক্ষা শুরু হওয়ায় তাদের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময়ও মেলেনি। তারা মনে করেন, পরীক্ষা যদি একটু পিছিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তারা আরও ভালোভাবে নিজেদের তৈরি করতে পারবেন। এই দাবি পূরণ না হলে তারা অসহযোগ আন্দোলন করার কথাও বলেছিলেন।
কিন্তু এই দাবি শিক্ষা বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছায়নি। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেসবুকে কিছু শিক্ষার্থীর পোস্ট ছাড়া তাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো আবেদন বা চিঠি আসেনি। ফলে তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি।
এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এক মাস পেছানোর দাবি নাকচ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এই দাবিকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে সরঞ্জাম পাঠানো হয়ে গেছে, প্রশ্নপত্র তৈরি এবং অন্যান্য কাজও সম্পন্ন। এই মুহূর্তে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া মানে পুরো প্রক্রিয়াটাই নতুন করে শুরু করা। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হবে।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, “আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। কয়েকজন শিক্ষার্থীর দাবি যৌক্তিক হলে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করতাম। কিন্তু এটা যৌক্তিক নয়।” তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার সময়সূচী আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের এতদিন প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় ছিল। এখন শেষ মুহূর্তে এসে সময় বাড়ানোর দাবি মানা সম্ভব নয়।
একই কথা বলেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার। তিনি জানান, “পরীক্ষার সব কিছু ঠিকঠাক আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি। তাই আমরা আগের সিদ্ধান্তেই অটল আছি।” তিনি আরও বলেন, এত বড় পরীক্ষার আয়োজন করতে অনেক পরিকল্পনা ও শ্রম লাগে। শুধুমাত্র কয়েকজনের দাবির জন্য সেটা বদলানো যায় না।
শিক্ষার্থীদের যুক্তি ও বাস্তবতা
শিক্ষার্থীদের দাবির পেছনে যে যুক্তি আছে, সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। রমজান মাসে রোজা রেখে পড়াশোনা করা সত্যিই কঠিন হতে পারে। সারাদিন না খেয়ে থাকা, তারপর রাতে পড়তে বসা এটা শরীরের ওপর চাপ ফেলে। আবার ঈদের পরপর পরীক্ষা হওয়ায় অনেকে মনে করছেন, ছুটির আমেজ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পরীক্ষা দেওয়া তাদের জন্য চাপের হবে। এই যুক্তিগুলো অনেক শিক্ষার্থীর মনে সহমত পেতে পারে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচী অনেক আগেই ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের এই সময়ের মধ্যে নিজেদের তৈরি করে নেওয়ার কথা। শিক্ষা বোর্ডও বলছে, যারা এই দাবি তুলেছেন, তারা সংখ্যায় খুবই কম। লাখ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত, তাদের কথাও তো ভাবতে হবে। শুধুমাত্র কয়েকজনের জন্য পুরো পরীক্ষা পেছানো হলে বাকিদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
এই ঘটনা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তারা বলছেন, রমজান ও ঈদের কারণে প্রস্তুতিতে ঘাটতি হতেই পারে। একজন অভিভাবক বলেন, “বাচ্চারা সারাদিন রোজা রাখে, তারপর পড়তে বসে। এতে তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। একটু সময় বাড়ালে তারা ভালো ফল করতে পারতো।”
অন্যদিকে, অনেক শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তই ঠিক। একজন শিক্ষক বলেন, “পরীক্ষার সময়সূচী অনেক আগে দেওয়া হয়েছে। এখন পড়াশোনা না করে আন্দোলনের কথা বলা ঠিক নয়।” তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের নিজেদের সময় বুঝে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।
শিক্ষা বোর্ড যেহেতু পরীক্ষা পেছানোর দাবি নাকচ করে দিয়েছে, তাই এখন দেখার বিষয় শিক্ষার্থীরা কী করে। তারা যদি সত্যিই অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখনো আন্দোলনের কোনো লক্ষণ দেখেননি। ফেসবুকে কিছু পোস্ট হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে এর সমর্থন খুবই কম।
অন্যদিকে, যে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত, তারা চান না এই দাবি-দাওয়ার জন্য তাদের পরীক্ষা পিছিয়ে যাক। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট করে পড়েছি। এখন পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে আমাদের ওপর চাপ বাড়বে।”
আরও পড়ুন– এসএসসি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫ প্রকাশ।
এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ও শিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তের এই টানাপোড়েনে সবচেয়ে বেশি চাপে আছে শিক্ষার্থীরাই। একদিকে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি, অন্যদিকে এই আলোচনা দুটোই মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। তবে শিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, ১০ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এখন শিক্ষার্থীদের উচিত শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মন দেওয়া। আন্দোলন বা দাবি-দাওয়া করে সময় নষ্ট না করে নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শিক্ষা বোর্ডও ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকে শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে পারে। তাতে হয়তো এমন বিতর্ক কম হবে।
শিক্ষা নিউজে শিক্ষা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের আপডেট সবার আগে জানতে শিক্ষা নিউজের সোসাল হ্যান্ডেলগুলো অনুসরণ করুন।
Discover more from Shikkha News | শিক্ষা নিউজ
Subscribe to get the latest posts sent to your email.